স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে বরিশাল নগরী জুড়ে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বিশেষ করে স্থানীয় পত্রিকার নাম, স্টীকার ও লোগো বিভিন্ন অবৈধ যানবাহনে লাগিয়ে দেদারছে চলছে নানা অপকর্ম। এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ কিছু না জানলেও অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ত্রুটিযুক্ত লাইসেন্স বিভিন্ন প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ইত্যাদি যানবাহনে বিভিন্ন পত্রিকার ভূয়া স্টীকার ব্যবহার করে মাদক পরিবহন, ডাকাতি, লুন্ঠনসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে একদল অপরাধীরা। এছাড়া এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পত্রিকার স্টীকার প্রিন্ট ও ফটোকপি করে পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে লাইসেন্সহীন যানবাহনের মালিকদের কাছে টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছে। এসব অপরাধ বন্ধে প্রশাসনকে আরও তৎপর হবার আহবান জানিয়েছেন গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সম্প্রতি নগরীর উত্তরাংশের এলাকায় বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকার স্টিকার ফটোকপি করে তা গাড়িতে লাগিয়ে মাদক বহন করার অভিযোগ উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদক সহ কয়েকজন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতার করলে চক্ষু কপালে ওঠার মতো ঘটনা সামনে আসে। পুলিশের হাতে আটক এসব মাদক ব্যবসায়ী পত্রিকা কর্তৃপক্ষের অগচরে দীর্ঘদিন বিভিন্ন পত্রিকার ম্যানেজ করা স্টীকার নিজেদের ব্যক্তিগত যানবাহনে ও ভাড়ায় চালিত গাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঝামেলা এড়াতে ব্যবহার করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমানে নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পৃথক দুটি টিম নগরীর কাশীপুর বাজার এলাকায় অভিযান চালায়। এর মধ্যে প্রথম অভিযানে অংশ নেয়া বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালে কাশীপুর বাজার সংলগ্ন তোতা মিয়ার মালিকানাধীন একটি ভবনে অভিযান চালায় তারা। এসময় সেখান থেকে ২৩ বোতল ফেন্সিডিল, ২০ ক্যান বিয়ার (আন্টান) এবং ৭৫০ মিলির এক বোতল বিদেশী মদসহ, ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক ফেন্সিডিলের খালি বোতল, পুড়িয়ে ফেলা বোতল, মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়’। তিনি আরো জানান, এসব মাদকদ্রব্যের পাশাপাশি ভবনটির গ্যারেজ থেকে একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ ১৯২৭৩৮), ২টি মোটরসাইকেল যার একটির নাম্বর (বরিশাল মেট্রো ল-১১-৫৭৯৮) জব্দসহ তিনজনকে আটক করা হয়। উল্লেখ্য, উদ্ধার করা প্রাইভেট কারটিতে দৈনিক আজকের বার্তার নামে তৈরী করা ভূয়া স্টীকার লাগানো ছিলো যা অরিজিনাল লোগোর সাথেও কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়না। আটককৃতরা হলো-নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা আজিজ আহমেদ বাবুল, তার সহযোগী সজল ও মুন্না। মাদকের সঙ্গে জড়িত এসব দুষ্কৃতকারীরা নিজেদের অপকর্মের ঢাল হিসেবে পত্রিকার ভূয়া স্টীকার ব্যবহার করতেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। অপর একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘মঙ্গলবার আটককৃতদের কাছ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সকাল ১০টায় একই এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখান থেকে মাদক ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম নামের আরেকজনকে আটক করা হয়। এসময় তার সাথে থাকা বাজারের ব্যাগে ২১ বোতল ফেন্সিডিল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং:১৫, ১০/০৩/২০২১) দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতের অভিযানের ঘটনায় আটক তিনজনসহ মোট চারজনকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার পলাতক আসামি প্রাইভেট কারের মালিক কাশীপুরের কাজী মোজাম্মেল হক মঞ্জুকে চার নম্বর আসামি করা হয়েছে। বুধবার সকালে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটক তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার অভিযানে আটক যানবাহনগুলোর একটিতে আজকের বার্তার ভূয়া স্টিকার লাগানো ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা অবাক হয়ে যান। পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমাদের পত্রিকার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা আছে এমন ব্যক্তিদেরকেই শুধু অফিস থেকে ইস্যু করা নির্দিষ্ট স্টীকার দেয়া হয়। এছাড়া আমরা ফটোকপি করা কোনো স্টীকার সরবরাহ করি না। পুলিশ যে যানবাহন আটক করেছে সেগুলোর স্টিকারগুলো আমাদের ইস্যু করা নয়। এছাড়া ঐ যানবাহনের মালিক আমাদের পত্রিকারও কেউ না’। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন যানবাহনে পত্রিকার লোগো ও স্টিকার ব্যবহার করে এসব অপরাধ সংগঠিত করার প্রবণতায় উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে দৈনিক আজকের বার্তার সম্পাদক কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বেও এধরণের ভূয়া স্টীকারের ব্যাপারে পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। যতদুর জানা যায়, মিডিয়ার নামে তৈরী করা স্টীকার চিনহিত একটি সিন্ডিকেটদ্বাররা নিয়ন্ত্রিত।
Leave a Reply